পরীক্ষার খাতা দেখছিলাম। খাতার উপর পরীক্ষার্থীর রোল নম্বর, পরীক্ষার বিষয়
ইত্যাদি তথ্য বাংলায় চাওয়া হয়েছে। তাই প্রায় সকল পরীক্ষার্থী এসব তথ্য
বাংলায় দিয়েছে। পরীক্ষার বিষয় লিখতে গিয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ পরীক্ষার্থী
লিখেছে ইংরেজী এবং বাকি ৩০ শতাংশ লিখেছে ইংরেজি।
সকলের পরিচিত একটি শব্দ ছাত্রছাত্রীরা ভুল লিখবে এটা আমি মেনে নিতে পারি না।
একসময় English এর বাংলা লেখা হতো 'ইংরেজী'।
উদাহরণস্বরূপ, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবই এর কথা ধরা যাক। এ বইয়ের "চাষার দুঃখু" প্রবন্ধের লেখক পরিচিতিতে আছে, "বড়ভাই-বোনের সাহচর্যে রোকেয়া বাংলা ও ইংরেজি ভালোভাবেই রপ্ত করেন...।" "রেইনকোট" গল্পে একাধিক স্থানে ইংরেজি শব্দটি এসেছে। যেমন, এক জায়গায় উল্লেখ আছে, "...ইংরেজির জন্য একটা, সর্বমোট দশটি আলমারি কলেজে নিয়ে আসা হয়েছে।" "বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ", "এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে", "আমি কিংবদন্তির কথা বলছি", "নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়" এসব কবিতার কবি পরিচিতিতে বেশ কয়েকবার ইংরেজি শব্দটি পাওয়া যায়। পাঠ্য উপন্যাস "লালসালু" এ একাধিকবার ইংরেজি শব্দটি এসেছে। যেমন, এক জায়গায় আছে, "হে[আক্কাস] নাকি ইংরাজি পড়ছে। তা পড়লে মাথা কী আর ঠাণ্ডা থাকে।"
১৯৯২ সাল থেকে পাঠ্যবইগুলোতে বাংলা একাডেমির বানানের নিয়ম অনুসরণ করা হচ্ছে এবং তখন থেকে ই-কার দিয়ে ইংরেজি লেখা হচ্ছে। বর্তমানে যারা ছাত্রছাত্রী তাদের প্রায় সকলের জন্ম ১৯৯২ এর পরে। নতুন প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীরা কেন এখনো পুরাতন বানান শেখে? কেন তারা ভুলকে, জরাজীর্ণকে নিয়ে পড়ে আছে?
শুরুতেই বলেছিলাম, মাত্র ৩০ শতাংশ পরীক্ষার্থী ইংরেজি বানানটি শুদ্ধ করে শিখেছে। এসব ছাত্রছাত্রী আসলে সঠিক বই থেকে সঠিক পাঠ শিখে। এরা স্বশিক্ষিত। প্রমথ চৌধুরীর কথা উল্লেখযোগ্য, "সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত।"
উপসংহারঃ আপনার সন্তানকে শিক্ষক নির্ভর না করে বইয়ের প্রতি মনোযোগী করুন।
লিখেছেনঃ Shehab Uddin- lecturer, FGC
সকলের পরিচিত একটি শব্দ ছাত্রছাত্রীরা ভুল লিখবে এটা আমি মেনে নিতে পারি না।
একসময় English এর বাংলা লেখা হতো 'ইংরেজী'।
বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত বাংলা থেকে ইংরেজি এবং ইংরেজি থেকে বাংলা উভয় অভিধানে English এর বাংলা অর্থ লেখা আছে ইংরেজি; কোথাও ইংরেজী লেখা নাই। পাঠ্যপুস্তক বোর্ড অনুমোদিত স্কুল ও কলেজের পাঠ্যপুস্তকগুলোর কোথাও ঈ-কার দিয়ে ইংরেজী লেখা নাই। বরং যে কোন শ্রেণির পাঠ্যবইগুলোর বিভিন্ন স্থানে ই-কার দিয়ে ইংরেজি শব্দটি লেখা আছে।১৯৯২ সালে বাংলা একাডেমি বানানের নতুন নিয়ম প্রবর্তন করে। সে নিয়মের ২.১ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে সকল অতৎসম অর্থাৎ অসংস্কৃত শব্দে ই-কার ব্যবহার করা হবে। ইংরেজি যেহেতু একটি অসংস্কৃত শব্দ, এর বানানে অবশ্যই ই-কার হবে।
উদাহরণস্বরূপ, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা পাঠ্যবই এর কথা ধরা যাক। এ বইয়ের "চাষার দুঃখু" প্রবন্ধের লেখক পরিচিতিতে আছে, "বড়ভাই-বোনের সাহচর্যে রোকেয়া বাংলা ও ইংরেজি ভালোভাবেই রপ্ত করেন...।" "রেইনকোট" গল্পে একাধিক স্থানে ইংরেজি শব্দটি এসেছে। যেমন, এক জায়গায় উল্লেখ আছে, "...ইংরেজির জন্য একটা, সর্বমোট দশটি আলমারি কলেজে নিয়ে আসা হয়েছে।" "বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ", "এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে", "আমি কিংবদন্তির কথা বলছি", "নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়" এসব কবিতার কবি পরিচিতিতে বেশ কয়েকবার ইংরেজি শব্দটি পাওয়া যায়। পাঠ্য উপন্যাস "লালসালু" এ একাধিকবার ইংরেজি শব্দটি এসেছে। যেমন, এক জায়গায় আছে, "হে[আক্কাস] নাকি ইংরাজি পড়ছে। তা পড়লে মাথা কী আর ঠাণ্ডা থাকে।"
১৯৯২ সাল থেকে পাঠ্যবইগুলোতে বাংলা একাডেমির বানানের নিয়ম অনুসরণ করা হচ্ছে এবং তখন থেকে ই-কার দিয়ে ইংরেজি লেখা হচ্ছে। বর্তমানে যারা ছাত্রছাত্রী তাদের প্রায় সকলের জন্ম ১৯৯২ এর পরে। নতুন প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীরা কেন এখনো পুরাতন বানান শেখে? কেন তারা ভুলকে, জরাজীর্ণকে নিয়ে পড়ে আছে?
সত্যি কথা বলতে, প্রথমত আমরা শিক্ষকরা এর জন্য দায়ী। আমাদেরকে আমাদের শিক্ষকরা 'ইংরেজী' লিখতে শিখিয়েছিলেন অথবা আমরা সেসময় বই পড়ে তখনকার প্রচলিত বানান শিখেছিলাম। শিক্ষক হয়ে আমরা আমাদের ছাত্রছাত্রীদের সেই পুরাতন নিয়ম শিখাচ্ছি। আমাদের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যারা শিক্ষক হচ্ছে তারাও তাদের ছাত্রছাত্রীদের সেই পুরাতন পড়া শেখাচ্ছে। এভাবেই চলছে।
রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর তার "An Eastern University" প্রবন্ধে যথার্থই অনুধাবন করেছেন, "...a
teacher can never truly teach unless he is still learning himself. A
lamp can never light another lamp unless it continues to burn its own
flame." অর্থাৎ, একজন শিক্ষক কখনো সত্যিকার অর্থে শিক্ষা দিতে পারেন না
যদি না তিনি নিজে তার পড়াশুনা চালিয়ে যান। একটি বাতি কখনো অন্য বাতিকে
জ্বালাতে পারে না যদি না এটি নিজেও জ্বলে। আমরা শিক্ষকরা মনে করি আমরাতো সব
জানি। আমরা এটা মনে রাখি না যে অন্য সব কিছুর মত আমাদের শেখা পড়াগুলোও
পরিবর্তিত হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, আমাদের কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলোও
আমাদের ভুল শিক্ষার জন্য দায়ী। এসব স্কুল আমাদের সন্তানদের ৪-১১ বছর বয়সেই
পণ্ডিত বানিয়ে ফেলতে চায়। তাই তারা পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের বই ছাড়াও
ছাত্রছাত্রীদের উপর অনেক অনেক বই চাপিয়ে দেয়। এসব অননুমোদিত বইয়ে অনুসরণ
করা হয় না কোন নিয়মকানুন। ভুলে ভরা এসব বই পড়ে শিক্ষার্থীরা আসলে ভুলই
শেখে। নিম্নমানের অনুপযোগী এসব বই আসলে ছাত্রছাত্রীদের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই
বেশি করে। শুরুতেই বলেছিলাম, মাত্র ৩০ শতাংশ পরীক্ষার্থী ইংরেজি বানানটি শুদ্ধ করে শিখেছে। এসব ছাত্রছাত্রী আসলে সঠিক বই থেকে সঠিক পাঠ শিখে। এরা স্বশিক্ষিত। প্রমথ চৌধুরীর কথা উল্লেখযোগ্য, "সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত।"
উপসংহারঃ আপনার সন্তানকে শিক্ষক নির্ভর না করে বইয়ের প্রতি মনোযোগী করুন।
লিখেছেনঃ Shehab Uddin- lecturer, FGC
ইংরেজি কোন সাল গণনা নেই- ব্রিটিশের গোলামির রক্তধারা যাদের ধমনীতে আজো প্রবাহমান তারাই কেবল তাই ইংরেজি সাল বলে।
ReplyDelete৮৬ সালে বাংলা একাডেমিতে এই সিদ্ধাই নেওয়া হয়েছিল যে, ইংরেজি নয়- খ্রিস্টাব্দ। আর ব্রিটিশরা এদেশে আসার পরও ঈসায়ী বা ঈং লেখা হতো- কালক্রমে ঈং ইং হয়ে যায়। এর পর থেকে ঈং বা ইং কে ব্রিটিশের চামচা গোলামরা ইংরেজি লেখতে অনেককে অভ্যস্ত করে ফেলে।
বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর জাতীয় দৈনিকগুলো ৮৬’র পর থেকে ইংরেজি বা খ্রিস্টাব্দ কোনটাই এখন আর উল্লেখ করে না- তা অবশ্য ভালো...