বাংলা ব্যাকরণ মতে– বাক্যে বা শব্দের সাথে ব্যবহৃত যে সকল ধ্বনি- বিভক্তি, বচন, লিঙ্গ ও কারকভেদে কোনভাবে পরিবর্তন হয় না, সে সকল পদকে অব্যয় বলে।
অব্যয়ের প্রকৃতিঃ
বাংলা ব্যাকরণে অব্যয়ের নির্ধারিত প্রকৃতিসমূহঃ
এর বহুবচন হয় না।ক্রিয়ার কাল দ্বারা প্রভাবিত হয় না।লিঙ্গান্তর নেই।এর সাথে কোন বিভক্তি যুক্ত হয় না।
অব্যয়রুপ ও ব্যবহারঃ
গঠন প্রকৃতির দিক থেকে অব্যয় এক বা একাধিক বর্ণ, বা শব্দ দিয়ে হতে পারে। যেমন–
একটি বর্ণ- ও,একাধিক বর্ণ- বটে।একটি শব্দ- অতএব, বটে।একাধিক শব্দ- হায় হায়, মরি মরি।
বাক্যে অব্যয়ের ব্যবহার বিবিধ কারণে হয়ে থাকে। এই পদটি নিজেকে অপরিবর্তনীয় রেখেঃ
বাক্যের শোভা বৃদ্ধি করে।বাক্যকে সংযুক্ত করে।শব্দের অর্থগত পার্থক্য সৃষ্ট করে।
প্রকারভেদঃ
বাংলা ভাষায় শব্দ-প্রকৃতি, ভাবগত অর্থ ও ব্যবহারিক মূল্যের বিচারে অব্যয়কে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগগুলো হলো- শব্দ-উৎসের বিচারে অব্যয়, ভাবগত অর্থের বিচারে অব্যয় ও ব্যবহারিক মূল্যের বিচারে অব্যয়।
শব্দ-উৎসের বিচারে অব্যয়
শব্দ-উৎসের বিচার হলো নির্ধারিত অব্যয়টি কোন ভাষার সূত্রে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে। এই বিচারে অব্যয় চার প্রকার।
তৎসম অব্যয়ঃ যে সকল অব্যয় সংস্কৃত থেকে অবিকৃতভাবে গৃহীত হয়েছে। যদি, যথা, সদা, সহসা, হঠাৎ, অর্থাৎ, দৈবাৎ, বরং, পুনশ্চ, আপাতত, বস্ত্তত।
তদ্ভব বা অর্ধ-তৎসম অব্যয়ঃ যে সকল অব্যয় সংস্কৃত থেকে বিবর্তিত হয়ে বাংলায় প্রবেশ করেছে। যেমন আর= সংস্কৃত অপর>প্রাকৃত আর>বাংলা
বাংলা অব্যয়ঃ যে সকল অব্যয় দেশী উৎস থেকে গৃহীত হয়েছে। আর, আবার, ও, হাঁ, না।বিদেশী অব্যয়ঃ সংস্কৃত, অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব ও দেশী অব্যয় ব্যতীত সকল অব্যয়কেই বিদেশী অব্যয় বলা হয়। আলবত, বহুত, খুব, শাবাশ, খাসা, মাইরি, মারহাবা।
ভাবগত ও ব্যবহারিক অর্থের বিচারে অব্যয়
ভাবগত ও ব্যবহারিক অর্থের বিচারে অব্যয় হলো শব্দ হিসাবে এবং তা বাক্যে কি ভাবগত অর্থে ব্যবহৃত হয়, তার বিচারে অব্যয়কে প্রাথমিকভাবে ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়।
সংযোগ-বাচক বা সম্বন্ধবাচকমনোভাববাচক (রাজা রামমোহন রায়ের মতে অন্তর্ভাবার্থক ) অব্যয়।শব্দ-উৎপাদক বা পরিবর্তক অব্যয়।
ব্যবহারিক মূল্যের বিচারে অব্যয়
ব্যবহারিক মূল্যের বিচারে অব্যয় অব্যয় পদ চার প্রকারের।
সমুচ্চয়ী অব্যয়ঃ যে অব্যয় পদ একটি বাক্যের সঙ্গে অন্য একটি বাক্যের অথবা বাক্যস্থিত একটি পদের সঙ্গে অন্য একটি পদের সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন ঘটায় তাকে সমুচ্চয়ী অব্যয় বা সম্বন্ধসূচক অব্যয় বলে। যেমন : এবং, ও, কিংবা, তবু প্রভৃতি।
পদান্বয়ী বা অনুসর্গ অব্যয়ঃ যে সকল অব্যয় শব্দ বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের পরে বিভক্তির ন্যায় বসে অন্য পদের অন্বয় বা সম্পর্ক নির্দেশ করে তাকে পদান্বয়ী বা অনুসর্গ অব্যয় বলে। যেমন : দিয়ে, থেকে, চেয়ে বিনা প্রভৃতি।
অনন্বয়ী অব্যয়ঃ যে সকল অব্যয় বাক্যের অন্য পদের সঙ্গে কোনো অন্বয় বা সম্বন্ধ না রেখে স্বাধীনভাবে ভাব প্রকাশ করে তাদেরকে অনন্বয়ী অব্যয় বলে। যেমন : মরি মরি, উঃ, বটে, ছিঃ, প্রভৃতি
অনুকার বা ধ্বনাত্মক অব্যয়ঃ যে অব্যয় অব্যক্ত রব, শব্দ বা ধ্বনির অনুকরণে গঠিত হয় তাকে অনুকার বা ধ্বনাত্মক অব্যয় বলে। যেমন : শনশন, চকচক, ছমছম, টনটন প্রভৃতি।
No comments:
Post a Comment